চেয়ারম্যানের নির্দেশের তোয়াক্কা নেই, টাকা পেলে না দেখে দিচ্ছে গাড়ির ফিটনেস (পর্ব-১)

সদ্য পদোন্নতি পেয়ে টাকার জন্য মরিয়া বরিশাল বিআরটিএর প্রণব নাগ

Passenger Voice    |    ০৫:২০ পিএম, ২০২৩-০১-২৭


সদ্য পদোন্নতি পেয়ে টাকার জন্য মরিয়া বরিশাল বিআরটিএর প্রণব নাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ সদ্য পদোন্নতি পেয়ে টাকার জন্য মরিয়া হয়ে অপকর্ম চালাচ্ছে বিআরটিএর বরিশাল সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ। টাকা পেলেই না দেখে মোটরযানের ফিটনেস সনদ ইস্যু করছেন তিনি। চেয়ারম্যানের আদেশের তোয়াক্কা নেই টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা না নিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করেন এই কর্মকর্তা। এদিকে এইসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপকর্মে সহযোগীতা করে কতিপয় আনসার সদস্যগণ। বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলে নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য নিযোগ দেয়া হলেও তারা সবাই দালালিতে ব্যস্থ।

সূত্র বলছে, সদ্য বিদায়ী বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) ফেরদৌস হোসেন এর নের্তৃত্বে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চট্টমেট্রো-ন-১১-২৬০৮ নং গাড়ি সহ একটি ডাকাত দলকে আটক করে পুলিশ। পরে একই দিন সন্ধ্যায় পেনাল কোর্ট তৎসহ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(f) এর  ৩৯৯/৪০২ ধারা মতে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং-১৯। মামলাটি কুমিল্লার আমলী আদালত নং-৯ এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে বিচারাধীন । সংবাদ লিখা পর্যন্ত চট্টমেট্রো-ন-১১-২৬০৮ নং গাড়িটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় জব্দ রয়েছে। তবে এই গাড়িটিও টাকার বিনিময়ে ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছে মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ।

গাড়িটি মালিক কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম গুনবতী বাজারের আমিনুল ইসলাম নয়ন (৩৫) প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমার গাড়িটি ২০২২ সালের ১৫ মার্চ একটি মামলায় কুমিল্লা সদর মডেল থানার পুলিশ আটক করে আদালতে জব্দ দেখিয়েছে। আমি গাড়িটি আমার জিম্মায় নেয়ার জন্য আদালতে গিয়ে ২০২২ সালের ১৯ মে আবেদন করি। আদালত মালিকানা যাচায় করার জন্য পুলিশ ও বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছেন। গাড়িটির কাগজপত্রের বৈধতার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত আমার গাড়ির প্রতিবেদন আদালতে পাঠায়নি। আমি গাড়িটির ফিটনেস সনদ নবায়ন করার জন্য কয়েকটি বিআরটিএর সার্কেল অফিসে যোগাযোগ করিলে মামলা থাকায় এবং গাড়ি পুলিশ হেফাজতে থাকায় কেউ ফিটনেস দিতে রাজি হয়নি।

পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর বরিশাল বিআরটিএর এক আনসার সদস্যের মাধ্যমে মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার গাড়িটি ফিটনেস প্রদান করেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমার গাড়ির মালিকানা যাচায় প্রতিবেদন বিআরটিএ এখনও আদালতে জমা প্রদান করেন নি।  

ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমি ফিটনেস প্রদানে ঘুষ গ্রহন করিনি। তবে সিনিয়র কর্মকর্তারা আমাকে বিভিন্ন সময় না দেখে কিছু ফিটনেস দেয়ার জন্য তদবির করেন। এই গাড়িটিও সিনিয়র কর্মকর্তার রেফারেন্সে আমি পরিদর্শন না করে ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছি। কোন সিনিয়র কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি না দেখে গাড়ির ফিটনেস দিয়েছে সে বিষয়ে কোন সদোত্তর প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে দিতে পারেন নি। 

সূত্র বলছে চট্টমেট্রো-ন-১১-২৬০৮ নং গাড়িটি সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছিলেন বিআরটিএ চট্টমেট্রো-১ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা। এরপরে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ফিটনেসটি নবায়ন করেন বরিশালের এই মোটরযান পরিদর্শক।  

বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত ০৭ আগষ্ট ২০২২ খ্রিঃ তারিখে নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০০১-১২.০০৮.২২-১৩৭১ নং স্বারকমূলে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রণব চন্দ্র নাগকে শর্ত সাপেক্ষে চাকরি(বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর বেতনক্রম ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য ভাতাদিসহ ১০ম গ্রেডের মোটরযান পরিদর্শক পদে অস্থায়ীভাবে প্রদোন্নতি প্রদানপূবর্ক তাঁকে বিআরটিএ খুলনা সার্কেল থেকে বরিশাল সার্কেলে বদলী করা হয়। 

পদোন্নতি ও বরিশাল বিআরটিএ সার্কেলে বদলী হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে যায় এই কর্মকর্তা। ঘুষের বিনিময়ে প্রদান করেন ভাঙ্গা ছেড়া লক্কড় ঝক্কর মোটরযানের ফিটনেস। টাকা দিলে এই কর্মকর্তার কাছে মিলে পরীক্ষা না দিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স । এই বিষয়ে থাকছে পরের পর্বে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ২০(১)(ক) ধারা অনুযায়ী মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন ও ফিটনেস প্রদানকালে মোটরযানের সাথে মোটরযান পরিদর্শকের স্থিরচিত্র ধারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ ।